নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্যে নির্বাচনের আগে ‘ভাইপো’ বলে এক অদ্ভুত সুরের ডাকে বক্তৃতা করে শ্রোতাদের হাসি আর হাততালি কুড়িয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় থেকে রাজ্য নেতৃত্ব। শুধু বিজেপি কেন সিপিআইএম এবং কংগ্রেস নেতৃত্বকেও এই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যায় না। আর সবচেয়ে অদ্ভুত ঘটনা হল ২০২১ বিধানসভা ফলাফল বের হতেই সেই ‘ভাইপো’ সুরের বক্রোক্তি, তাঁদের মুখ থেকে একেবারে উধাও। কারণ, দিদিমণির ভাইপো বলে এতদিন যাঁকে ব্যঙ্গ করে এসেছেন বিরোধীরা সেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২১-এর নির্বাচনের লড়াইয়ের ময়দান দাঁড়িয়ে থেকে প্রমাণ করে দিয়েছেন তিনি দিদিমণির ভাইপো নন, তিনি রাজ্য-সহ দেশের তৃণমূল নেতৃত্বের এক গুরুত্বপূর্ণ মুখ। দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরবর্তী দাবিদার। একের পর এক নির্বাচনী জনসভায় তাঁর জনসমর্থন প্রমাণ করেছে সেই কথা।
২০২১-এর নির্বাচনী প্রচারে বিরোধীদের প্রধান অস্ত্র ছিল মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো তোষণ। দলে ভাইপোর প্রভাব বাড়ানোর জন্য দিদিমণির প্রাণপাত প্রচেষ্টা। এটি যে বিরোধীদের মিথ্যা প্রচার ছিল তা প্রমাণ করে দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একদিকে নিজের দলের অন্দরে একাধিক নেতার তাঁর বিরোধিতা করা, অন্যদিকে সেই বিরোধিতাকে কাজে লাগিয়ে বিজেপির দলবদলের খেলা চালিয়ে যাওয়ার রাজনীতির মধ্যে দাঁড়িয়ে, প্রবল চাপকে উপেক্ষা করে পরিণত নেতার মতো সামনে দাঁড়িয়ে সেনাপতির ন্যায় লড়াই পরিচালনা করে গেছেন তিনি। অন্যদিকে সিবিআইয়ের ক্রমাগত আক্রমণ, স্ত্রী এবং পরিবারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার পরেও তিনি শান্ত মাথায় ভোটের ময়দানে লড়ে গেছেন। এর মধ্যে আচমকা দুর্ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পায়ের আঘাত সাময়িক হলেও চিন্তায় ফেলে। সেইসময় সারা রাজ্য চষে বেড়িয়েছিলেন তিনি দিন রাত এক করে। দল তাঁর সেই লড়াইয়ের স্বীকৃতি আজ দিয়েছে। তিনি এখন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তাঁর মাথার ওপর কেবলমাত্র চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হিন্দি এবং ইংরাজিতে কথা বলাতে অত্যন্ত সুপটু এবং সাবলীল। যা একজন সর্বভারতীয় নেতার পক্ষে অত্যন্ত জরুরি। দলের সকলেই আস্থা রেখেছেন তাঁর ওপর। তাঁরা মনে করছেন শুধু রাজ্যে নয়, সারা দেশে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি চাইছেনও সারাদেশে দলের মজবুত সংগঠন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে মোদি বিরোধী দল হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেস এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নিতে চলেছে। এবং জাতীয় রাজনীতিতে দলের ভাবমূর্তি তুলে ধরার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের।