নিজস্ব প্রতিনিধি: দীর্ঘ পনেরো দিনের লকডাউন বা কোভিড বিধিনিষেধ শেষ হয়েছে রাজ্যে। মেয়াদ বেড়েছে আরও পনেরো দিনের। এরই মধ্যে কমছে প্রাত্যহিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। কিন্তু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে দিচ্ছে না মৃত্যুর হার। মৃত্যুসংখ্যা কমলেও একশোর নীচে নামছে না। ঘরবন্দি মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন করোনার এই সর্বগ্রাসী রূপে। মানসিকভাবে অনেকেই ভেঙে পড়ছেন। বিশেষ করে, আক্রান্তেরা। যাঁরা করোনা পজিটিভ কিন্তু রয়েছেন হোম আইশোলেশনে। তাঁদের কিছু উপসর্গ ছাড়া বিশেষ সমস্যাও নেই। তবুও তাঁদের থাকতে হচ্ছে বাড়ির লোকজনের থেকে আলাদাভাবে। কম করে দিন চোদ্দো-পনেরো। অন্যদের থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখে একাকিত্বে ভুগছেন অনেকেই। প্রতিনিয়ত নানান খবরে ভয়ে সিটিয়ে যাচ্ছেন। নানা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন বহুজন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন ঘটনা ঘটছে বহু। আর সেইসব ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলার বিষয়েও তাঁরা দৃষ্টি দিতে বলেছেন। আত্মীয়-পরিজনের উচিত এই সময় তাঁদের পরিবারের অসুস্থ সদস্যের দিকে মানবিক হাত বাড়িয়ে দেওয়া। তাঁদের আচার-আচরণ থেকে আক্রান্ত রোগী যেন এমন মনে না-করেন তাঁকে অবহেলা করা হচ্ছে। তিনি যেন মনে না-করেন, তাঁকে আলাদা করে রাখা হচ্ছে মানে তাঁকে ভয় পাচ্ছে অন্যেরা, তাঁকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের এইসময় একটা বড় সাহায্য করেছে হাতে ফোন তুলে দিয়ে। নিয়মিত ফোন করে সংবাদ নেওয়া। কেমন আছে, খেতে ভাল লাগছে কিনা, কি খাবে বা কি খেতে ইচ্ছে করছে, আজ কোন সিনেমা দেখল বা টিভি সিরিয়াল নিয়ে আলোচনা চালানো উচিত। কোভিড সংক্রান্ত কোনও আলোচনা না-করাই উচিত তাঁর সঙ্গে। বিনোদনই পারে আক্রান্ত মানুষটির জীবনের স্বাদ পুরোপুরি ফিরিয়ে দিতে। পজিটিভ মানুষটির হালকা লাগবে নিজেকে।
এই সময় পরিবারের সদস্যরাও যতটা পারবেন এই সংক্রান্ত খবর থেকে নিজেদের দূরে রাখবেন।
শুধু পারিপার্শ্বিক মানুষজন নন, সকলেই সচেতনভাবে কিছু বিষয় মেনে চলুন। ভয়ভীতি ব্যাপারটা ত্রিসীমানায় ঢুকতে দেবেন না। যে-কোনও সমস্যা হলে ডাক্তারকে জানান। উতলা হবেন না।
প্রাত্যহিক কাজের চাপে নিজের যে-সময়টুকু হারিয়ে ফেলেছিলেন জীবন থেকে তাঁরা এই সময়টাকে কাজে লাগান। এইসব দিনগুলো মহা মূল্যবান সময় জীবনের। বইগুলো সেলফ থেকে টেনে বার করুন, ধুলো ঝেড়ে গুছিয়ে ফেলুন। দেখবেন সেই বইয়ের মধ্যে অনেক বই-ই আলাদা করে সরিয়ে রাখেছেন পাশে, আর একবার পড়ার জন্য কিংবা নতুনভাবে পড়ার জন্য। পড়ুন, মন দিয়ে পড়ুন। কারণ, এগুলোর সঙ্গে হয়তো জড়িয়ে আছে নিজের ছোটবেলা, নিজের যৌবন, আনন্দ, রোম্যান্স।
মোবাইলে সিনেমা দেখুন বা অন্যকিছু। ভুলেও করোনা সংক্রান্ত কিচ্ছু নয়। বিনোদন কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আপনার বিভ্রান্ত মনকে পাঠিয়ে দেবে এক অন্য জগতে। চেষ্টা করুন মজার ছবি, গোয়েন্দা ছবি ইত্যাদি। সত্যজিৎ রায়ের শতবর্ষ চলছে, বিশ্ববরেণ্য এই পরিচালকের ছবি দেখা থাকলেও আর একবার দেখুন, না-থাকলে অবশ্যই দেখুন। যাঁর যেমন পছন্দের তেমন সিনেমাই দেখুন। মন সবসময়ই তাজা রাখুন, ফ্রেশ রাখুন। কোনও ভয়ভীতি জমতে দেবেন না।
বহুদিন প্রিয়জনদের ফোন করা হয়নি তাঁদের সঙ্গে ফোনে আড্ডা মারুন। শরীর কেমন আছে জানতে চাইলে বলবেন, ভাল আছি। পরমুহূর্তেই অন্য প্রসঙ্গে চলে যাবেন। যাঁরা লিখতে ভালবাসেন তাঁরা লিখুন। অনেকদিন ধরেই ওই প্রসঙ্গে লিখবেন, লিখে ফেলুন। ছবি আঁকতে জানলে তাই আঁকুন। ক্যানভাস বা ড্রয়িং শিটে আঁকুন যাতে আপনি স্বচ্ছন্দ।
আর ডাক্তারের পরামর্শমতো শরীরচর্চার অভ্যাস বজায় রাখুন। দেখবেন সুস্থ থাকবেন। জীবন বিমুখ হবেন না, জীবনকে ভালোবাসুন।